নাদিম মজিদ বাংলাদেশের একজন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও লেখক। তিনি ঢাকাভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি বাংলা পাজল লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO), যা ২০১৬ সালে ন্যাশনাল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েব, অ্যাপ, সফটওয়্যার, গেম ও বটসহ একশোরও বেশি প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। প্রযুক্তি, ব্যবসা ও যোগাযোগ উন্নয়নে তিনি সফটওয়্যার ও মোবাইল অ্যাপ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
লেখালেখির ক্ষেত্রেও তিনি সক্রিয়—কালের কণ্ঠ ও সমকাল-এর মতো পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে ফিচার ও পাজল লিখছেন। পাশাপাশি, তিনি বাংলাদেশের প্রথম বাংলা সুডোকু ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন। ২০১৭ সালে তাঁর লেখা উপন্যাস মহাজীবন এক্সপ্রেস প্রকাশিত হয়। পরের বছর তিনি আরও দুটি বই লেখেন—সোশ্যাল মিডিয়া ব্র্যান্ডিং (অগমেন্টেড রিয়েলিটি ভিত্তিক) এবং যেভাবে হবেন সফল উদ্যোক্তা। নাদিম মজিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং State University of New York-এ Strategic Self-Marketing and Personal Branding বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেছেন Profile।
২০২৪ এ যোগাযোগ হয় নাদিম ভাইয়ের সাথে। তার সাথে কথোপকথনে উঠে আসে বিজ্ঞানী অর্গ এর পিছনের গল্পগুলি। ইউটিউবে আমাদের আলোচনাটি পাবেন এইখানে: https://www.youtube.com/watch?v=D4QdIgsWB8Q
প্রশ্ন: আপনি বর্তমানে কোথায় কাজ করছেন এবং কী ধরনের দায়িত্ব পালন করছেন?
ড. মশিউর রহমান: আমি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে ওমরন হেলথ কেয়ার নামে একটি জাপানি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। এটি মূলত বিশ্ববিখ্যাত ব্লাড প্রেশার মেশিন ও অন্যান্য হেলথ ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। আমি এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার, এশিয়া প্যাসিফিক হেডকোয়ার্টার পদে কর্মরত। আমাদের কাজের পরিধি ভারত থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।
আমার দায়িত্ব হচ্ছে এই অঞ্চলের জন্য মোবাইল অ্যাপ, সফটওয়্যার ও ক্লাউড-ভিত্তিক স্বাস্থ্য সমাধানগুলো পরিচালনা করা। এখন আর শুধু ডিভাইস থাকলেই হয় না—মানুষ তাদের স্বাস্থ্যতথ্য ক্লাউডে সংরক্ষণ করতে চায়, চিকিৎসক বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করতে চায়। সেই পুরো ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরিই আমাদের মূল কাজ।
প্রশ্ন: আপনার শিক্ষাজীবনের সূচনা কোথায়?
উত্তর: আমি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করি। এরপর ১৯৯৪ সালে জাপান সরকারের মনবুশো স্কলারশিপে পড়তে যাই। ভর্তি হই Nara College of Technology-এ, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। জাপানে পড়াশোনার ধরনটা একটু ভিন্ন—কলেজের পাঠ্যক্রমই পাঁচ বছরের, যেখানে আমি তৃতীয় বর্ষে সরাসরি যোগ দিই।
এরপর Toyohashi University এবং জাপানের জাতীয় গবেষণা সংস্থা NAIST (Nara Institute of Science and Technology)-এ মাস্টার্স ও পিএইচডি সম্পন্ন করি। পরে যুক্তরাষ্ট্রে Marshall University-তে পোস্টডক করি। সেখানে আমি বায়োসেন্সর নিয়ে কাজ করতাম। যদিও আমার মূল ব্যাকগ্রাউন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, গবেষণার মাধ্যমে আমি বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিকে এগিয়ে আসি।
প্রশ্ন: আপনার পরিবারে লেখালেখি ও শিল্পচর্চার প্রভাবও বেশ গভীর ছিল, তাই না?
উত্তর: হ্যাঁ, ছোটবেলা থেকেই আমি এমন এক পরিবারে বড় হয়েছি যেখানে শিল্প ও সাহিত্য ছিল নিত্যসঙ্গী। মোহাম্মদপুরে আমাদের যৌথ পরিবারে উপরে-নিচে আত্মীয়স্বজনরা থাকতেন। আমার মামা ছিলেন প্রয়াত ভাস্কর মৃণাল হক—তার কাছেই প্রথম রঙ ও আকারের জগৎ চিনেছিলাম। মামি অনামিকা হক লিলি ছিলেন একজন খ্যাতিমান শিশুতোষ সাহিত্যিক, একুশে পদকপ্রাপ্তও। তিনিই আমাকে লেখালেখির অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আর আমার বাবা, মোহাম্মদ মনসুর রহমান, ছিলেন বিসিআইসির কেমিস্ট। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে বিভিন্ন কারখানায় গিয়েছি—কীভাবে সাবান, ম্যাচ বা লোশন তৈরি হয়, তা চোখে দেখেছি। সম্ভবত এই কারণেই এখনো আমি “কিভাবে কাজ করে” ধরণের লেখা লিখতে ভালোবাসি।
প্রশ্ন: তাহলে “বিজ্ঞানী.অর্গ” ধারণাটা কীভাবে এলো?