ড. মশিউর রহমান প্রকাশ: বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫

লিংক: https://www.bonikbarta.com/editorial/fBR7OHcKYDggrVdy

image.png

বিটকয়েনের দাম সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড মূল্য স্পর্শ করেছে। ২০২৫ সালের এ জুলাইয়ে বিটকয়েনের মূল্য প্রথমবারের মতো ১ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৪ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

বিটকয়েনের দাম সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড মূল্য স্পর্শ করেছে। ২০২৫ সালের এ জুলাইয়ে বিটকয়েনের মূল্য প্রথমবারের মতো ১ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৪ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী এবং সংবাদমাধ্যমে এক ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা এখন ডিজিটাল মুদ্রাকে নতুন নিরাপত্তাহীন পরিবেশে সম্ভাবনাময় বিকল্প হিসেবে দেখছেন। এমনকি ট্র্যাডিশনাল আর্থিক মহল যাদের আমরা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলি তারাও ক্রিপ্টোবাজারের দিকে ঝুঁকছে। উদাহরণস্বরূপ বিটকয়েনের পাশাপাশি ইথেরিয়ামের দামও ২০২১ সালে রেকর্ড অতিক্রম করে; ওই বছর ইথেরিয়াম প্রথমবার ৩ হাজার ৬১৬ ডলারে পৌঁছায়, যা বছরে ৩৮৫ শতাংশ উত্থানের পরিচায়ক ছিল।

গত নভেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের ঘোষণার পর বিটকয়েনের মূল্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়। বর্তমান সময়ে ট্রাম্প থেকে শুরু করে প্রভাবশালী নীতিনির্ধারকদের সমর্থনের কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে আরো আলোচনায় নিয়ে এসেছে। বিশ্ব অর্থনীতি যখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যেমন যুদ্ধ বা মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি সংকটের সময়ে মানুষের কাছে স্বর্ণ হয়ে ওঠে আশ্রয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সম্পদ। তাই সোনাকে বলা হয়ে থাকে ‘সেফ হ্যাভেন অ্যাসেট’। বর্তমানে বিশ্ব কিছুটা সেই রকমই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে গতানুগতিক সোনার পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের দিকে সবাই ঝুঁকছে।

এবার দেখা যাক ক্রিপ্টোকারেন্সি কী? এটি হলো ডিজিটাল মুদ্রা, যা একক কোনো সংস্থা বা সরকার নয়, বরং গণিতের জটিল শৃঙ্খল পদ্ধতি, যা ব্লকচেইন নামে পরিচিত সেই পদ্ধতি দ্বারা সুরক্ষিত। এর সূচনা হয় ২০০৯ সালে যখন বিশ্ব এক বিশাল আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তখন ‘সাতোশি নাকামোটো’ ছদ্মনামধারী একজন ব্যক্তি প্রথমবার বিটকয়েন নামে ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেন। মজার ব্যাপার হলো, এ ছদ্মনামধারী ব্যক্তিটিকে এখন পর্যন্ত কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। ব্লকচেইন একটি অদলবদলহীন বা পরিবর্তনহীন লেজার পদ্ধতি। এর প্রতিটি লেনদেন গ্রুপ করে ‘ব্লক’ আকারে যুক্ত হয় ও ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে সুরক্ষিত থাকে। অর্থাৎ প্রতিটি ব্লক থেকে পরবর্তী ব্লক অবধি খুঁটিনাটিভাবে সম্পৃক্ত থাকায় কোনো বৈধ নয় এমন পরিবর্তন থাকাটাই কঠিন। এ ব্লকচেইন প্রযুক্তিটি বিটকয়েনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। এর ফলে অধিক জমাকৃত অংশকে বারবার ব্যয় করতে না পেরে প্রতারণা করা কঠিন হয় এবং এর ভেতরের তথ্যের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে বিটকয়েন ছাড়াও এথেরিয়াম, রিপল, মার্কার্ড নেওডলস (ডজকয়েন) প্রভৃতির মতো আরো অনেক ডিজিটাল মুদ্রা রয়েছে, যাদের মধ্যে এথেরিয়াম ‘স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট’ নামের স্বয়ংক্রিয় চুক্তি সম্পাদনের প্লাটফর্ম হিসেবে বিশেষ পরিচিত।

বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ ক্রিপ্টোকারেন্সিকে গ্রহণযোগ্যতা দিচ্ছে। লাতিন আমেরিকার এল সালভাদর ২০২১ সালে প্রথম দেশে বিটকয়েনকে আইনি মুদ্রা হিসেবে ঘোষণা করে। সেখানে রাষ্ট্রপতি নায়িব বুকেলে জানিয়েছিলেন, বিটকয়েন দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিনিয়োগ, পর্যটন, উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন আনবে। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভার্চুয়াল অ্যাসেট রেগুলেটরি অথরিটি (ভিএআরএ) গঠন করে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করেছে, যা আন্তর্জাতিক ক্রিপ্টো কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এশিয়ায় সিঙ্গাপুর ফাইন্যান্সিয়াল কর্তৃপক্ষ (এমএএস) এটিকে অনুমোদন দিয়ে দেশটিকে এশিয়ার ক্রিপ্টো হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। উদাহরণস্বরূপ বিটকয়েন এবং অন্যান্য ডিজিটাল অ্যাসেটের জন্য সিঙ্গাপুরে চলতি বছরই ভিসা-প্রসেসিং, ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট সেবা চালু হচ্ছে। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের জুগ শহরের ‘ক্রিপ্টো ভ্যালি’ থেকে শুরু করে নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা মুদ্রাস্ফীতি বা রেমিট্যান্স খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে পিয়ার-টু-পিয়ার ক্রিপ্টো ট্রেডের দিকে ঝুঁকছে। এ পদ্ধতিতে সনাতন ব্যাংকের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে নয়, সরাসরি দুজনের মধ্যে অর্থ লেনদেন সম্ভব হবে কোনো খরচ ছাড়াই। ধারণা করা হয়, বর্তমানে বিশ্বের মোট ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও স্পষ্ট। অনেক উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যালান্স শিটে কোটি কোটি ডলার বিটকয়েন যুক্ত করেছে। উদাহরণস্বরূপ টেসলা ও মাইক্রোস্ট্র্যাটেজির মতো কোম্পানি সর্বশেষ বছরগুলোয় নগদের অংশ বিটকয়েনে বিনিয়োগ করেছে। বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোও নতুন ক্রিপ্টো-ধনী গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পেমেন্টে ডিজিটাল কয়েন গ্রহণ করছে। ফরাসি প্রিন্টেম্পস ডিপার্টমেন্ট স্টোর বিটকয়েন ও ইথেরিয়াম গ্রহণ করতে শুরু করেছে, আর ধনী ব্যক্তিদের বিলাসবহুল ক্রুজ বা নৌবিহার সংস্থা তাদের ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের বার্ষিক পাসের জন্য বিটকয়েন পেমেন্ট চালু করেছে। এসব উদ্যোগে ব্র্যান্ডগুলো নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে এগিয়ে থাকার মাধ্যমে তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ায় এবং পরিচিতি পেতে চায়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে টাকা পরিশোধের সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উদ্ভাবনী ভাবমূর্তি বিশ্বের কাছে, বিশেষ করে তাদের ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক লেনদেনে ক্রিপ্টো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এর ব্যবহার বাড়ছে। কিছু দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে কম খরচের মাধ্যম হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সিভিত্তিক রেমিট্যান্স সেবা চালু করেছে, যদিও এক্ষেত্রেও বিশ্বব্যাপী খরচসাশ্রয় সমীকরণ এখনো মূল্যমানের অস্থিরতার বাধায় রয়েছে।

এসব সুবিধা ও খবরের পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে বিপদও রয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য মারাত্মক ওঠানামা করে। ফলে ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ এবং এটি ডিজিটাল সোনা নয়। এছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে অনেক ভয়ের ব্যাপার রয়েছে কেননা সনাতন মুদ্রার মতো এর বিপরীতে কোনো সম্পদকে রাখা হয়নি। তাই এর দামটি ঠিক কত হবে তা যৌক্তিক উত্তর নেই। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউজিন এফ ফামা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে আগামী দশকে বিটকয়েন সম্পূর্ণ মূল্যহীন"হয়ে যেতে পারে। এছাড়া এটি নিয়ে রয়েছে হরেক রকমের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা। কয়েক বছর ধরেই সহস্র কোটি ডলার বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এ ধরনের প্রতারিত হওয়ার নাম হয়ে গেছে ‘ক্রিপ্টো স্ক্যাম’।

২০২৪ সালে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুসারে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিয়োগের প্রতারণায় প্রায় ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার লোকসান হয়েছে। একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছর ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি ইথার চুরি হয়েছিল এক হ্যাকারের কারসাজিতে। তাই বিভিন্ন দেশ ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণে তাদের বিধিমালা ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো নিয়ে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ ভারত ও চীনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানগত নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশেও ক্রিপ্টো লেনদেনের ঝুঁকি নিয়ে সতর্কবার্তা এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সাল থেকেই ঘোষণা দিয়েছে, ভার্চুয়াল মুদ্রাকে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারবে না এবং ২০১৬ সালে সতর্ক করে বলা হয়েছিল যে ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেন অর্থ পাচার বা জঙ্গি তহবিলে যুক্ত হলে তা অপরাধ হিসেবে গৃহীত হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো ক্রিপ্টোসংক্রান্ত নীতি নিয়ন্ত্রণ না করায় আন্তর্জাতিক তালিকায় পিছিয়ে পড়েছে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তির শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। স্মার্ট কন্ট্র্যাক্টের মাধ্যমে চুক্তির শর্তাধীনে টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থানান্তর এবং ই-নিলাম চালু হয়েছে, যা ব্যাংক বা নোটারি ছাড়াই চুক্তি সম্পাদনে সহায়তা করে। এনএফটি শিল্পকর্ম বিক্রির ক্ষেত্রে মালিকানা স্বাতন্ত্র্য নিশ্চিত করছে; যেমন ইতালিতে বিখ্যাত ডিজিটাল শিল্পকর্ম নিলামে বড় অংকের বিড পেয়েছিল। এছাড়া সরবরাহ করা পণ্যের ট্র্যাকিং বা অবস্থান নির্ণয়, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের ডাটাবেজ, নির্বাচন-ভোটিং ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ব্লকচেইন ব্যবহৃত হচ্ছে। মূলত ব্লকচেইন একটি অপ্রতিরোধ্য ডাটাবেজ, যার তথ্য অপরিবর্তনীয় থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু ক্ষেত্রে এ ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল পরিচয়পত্র ও নথিপত্র যাচাই, জালিয়াতি প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আর্থ-প্রতিষ্ঠানের তদন্তেও দেখা গেছে যে পরবর্তী পাঁচ বছরে ব্লকচেইন প্রযুক্তি আর্থিক সেবার পাশাপাশি সরবরাহ ও পরিবহন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য খাত ইত্যাদিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির গ্রহণযোগ্যতা এখনো সীমাবদ্ধ। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রাকে ‘শত্রুভাবাপন্ন’ হিসেবে দেখেছে। ২০২১ সালে সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক চিঠিতে বলা হয়, যখনই ভার্চুয়াল মুদ্রা দিয়ে অর্থ পাচারের মতো অপরাধ দেখবেন, তখন তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ওই চিঠিতে উল্লেখ ছিল, নিজের নামে ক্রিপ্টো লেনদেন এখনো অপরাধ নয়, তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা সতর্ক থাকবেন। তবে বর্তমানে দেশে যথাযথ আইনকানুন তৈরি না হওয়ায় অনেক ভেঙেচুরে বোঝাপড়ায় নীতিগত দিশাহীনতা রয়ে গেছে। এর ফলস্বরূপ বাংলাদেশে ক্রিপ্টোসংক্রান্ত কোনো বৈধ লেনদেনের সুযোগ নেই, এমনকি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও লেনদেনে সাহায্য করতে পারে না। এর বিপরীতে প্রযুক্তিবিদদের মতে, ক্রিপ্টো ও ব্লকচেইন ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে এগুলো কাজে লাগানো দরকার। তারা সতর্ক করে দেন, সরকারের উচিত উপযুক্ত নীতি তৈরি করে উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করা; না হলে প্রবাসী রেমিট্যান্সের দ্রুত মোবিলাইজেশন, ফিনটেক-চালিত নতুন পেমেন্ট সিস্টেমের সুযোগ সবই হাতছাড়া হতে পারে। ফিনটেক সূচকে বাংলাদেশ পেছনে পড়লেও এখনো সিলিকন ভ্যালির প্রতিযোগিতা ধরার মতো প্রযুক্তিবিদ আছে।

আমার মতে, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার, আইটি কর্মী এবং উদ্ভাবনমূলক উদ্যোক্তাদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি হতে পারে অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম মাধ্যম। তাই স্যান্ডবক্স রেগুলেশন বা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে প্রযুক্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ প্রযুক্তি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এটি নিয়ে ভয় পেলে আশি ও নব্বইয়ের দশকে ভিওআইপি নিয়ে আমাদের লুকোচুরি খেলার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। নিষিদ্ধ থাকার কারণে এক শ্রেণীর অসাধু এটির সুবিধাগুলো নিয়ে বিস্তর সম্পদ করতে পারে, যা ভিওআইপির ক্ষেত্রে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। প্রযুক্তি প্রত্যাখ্যান নয়, বরং এর সুযোগ ও ঝুঁকি বুঝে নেয়াই হবে বাস্তবসম্মত পন্থা।

সব মিলিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশ্ব অর্থনীতিতে মিশ্র প্রভাব ফেলছে। একদিকে এটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরো গতিশীল করে তুলছে, অন্যদিকে পারিপার্শ্বিক ঝুঁকি ও প্রতারণার তীর রেখে দিচ্ছে। আমাদের দেশের অগ্রণী অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের চোখে এটা একটি চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ উভয়ই। আসন্ন দিনে সরকারকে ভবিষ্যৎ বিবেচনায় ক্রিপ্টো এবং ব্লকচেইন নিয়ে উপযুক্ত নীতিনির্ধারণ করতে হবে। কেবল নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং দক্ষ নিয়ন্ত্রণবিধিও প্রয়োজন। পরিশেষে এ প্রশ্ন থেকে যায়—ডিজিটাল মুদ্রাকে আমরা কি ঘরে ঢুকতে দেব, নাকি আরো সতর্ক থাকার পথ বেছে নেব?

ড. মশিউর রহমান: তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এবং লেখক। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে ওমরন হেলথকেয়ারে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত