হাইকু (Haiku) হচ্ছে জাপানি সাহিত্যের এক অনন্য কবিতা রূপ, যা মাত্র তিনটি লাইনে বিশাল এক অনুভূতি, দর্শন কিংবা প্রকৃতির মুহূর্তকে ধরে রাখে। সাধারণত এর ছন্দ বিন্যাস হয় ৫-৭-৫ শব্দমাত্রায়। এই ছোট্ট কাঠামোর মাঝেই হাইকু ফুটিয়ে তোলে প্রকৃতির সৌন্দর্য, জীবনের গভীরতা ও সময়ের অস্থায়িত্ব।

🏯 হাইকুর ইতিহাস ও উৎপত্তি

হাইকুর উৎপত্তি ১৭শ শতকের জাপানে, যখন কবিগণ প্রকৃতির সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলছিলেন। এই ধারার প্রধান পথপ্রদর্শক ছিলেন মাতসুও বাশো (Matsuo Bashō), যিনি হাইকুকে শুধুই কবিতা হিসেবে নয়, বরং ধ্যান ও জীবনদর্শনের এক অনুশীলন হিসেবে দেখতেন।

শুরুতে হাইকু ছিল দীর্ঘ কবিতার (রেনগা) প্রারম্ভিক অংশ, যাকে বলা হতো “হোক্কু” (hokku)। পরবর্তীতে এটি আলাদা কবিতা রূপে প্রতিষ্ঠা পায় এবং “হাইকু” নামে পরিচিতি লাভ করে।

🌱 ছোট কিন্তু গভীর কেন?

হাইকুর বিশেষত্ব হলো এর সংক্ষিপ্ততা এবং প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীলতা। এই সীমিত শব্দের মধ্যে কবি এমন এক মুহূর্ত বেছে নেন যা চিরন্তন। হাইকুর পাঠককে শুধু পড়তে নয়, অনুভব করতেও বাধ্য করে। কখনো একটি ব্যাঙের লাফ, কখনো একটি ফুলের ঝরা — এতটাই গভীর যে পাঠকের মনে দীর্ঘ সময় দাগ কাটে।

🎉 একটি মজার তথ্য

জাপানে হাইকু লেখা ও পড়া একটি জনপ্রিয় চর্চা। স্কুলে শিশুদের হাইকু শেখানো হয়, এবং প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ হাইকু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এমনকি জাপানে হাইকু দিবস (Haiku Day) পালিত হয় প্রতি ১৭ আগস্টে!


📚 এই সিরিজ কেন?

বাংলাদেশি পাঠকদের জন্য আমি এই হাইকু সিরিজে তুলে ধরছি জাপানের বিখ্যাত ২০টি হাইকু, যাতে আমরা জানতে পারি কত গভীরভাবে একজন কবি ছোট একটি মুহূর্তের মধ্যে জীবনের দর্শন লুকিয়ে রাখতে পারেন। প্রতিটি হাইকুর সঙ্গে থাকছে এর ব্যাখ্যা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও কবির জীবনদর্শনের ছোঁয়া — যাতে হাইকুকে শুধু পাঠ করা নয়, অনুভব করাও সম্ভব হয়।