https://www.bigganchinta.com/space/y0rvp6leqr

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ১৩: ০০

image.png

অনিক সবে মাধ্যমিক স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। একদিন ক্লাশে মহাকাশের মজার কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন এক শিক্ষক। সেদিন রাতে সে মুগ্ধ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখছিল। তার চোখে অবাক বিস্ময়—কত তারা সেখানে রয়েছে। হঠাৎ তার পাশে এসে হাজির হলো তার দাদু। অনিক তার দাদুকে জিজ্ঞাস করলো, ‘দাদু মঙ্গল গ্রহ কোনটি?’

দাদু তাকে মঙ্গল গ্রহটি দেখালে সে বিস্ময়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘দাদু, আমরা কি একদিন ওখানে থাকতে পারবো?’

দাদু মৃদু হাসলেন। ‘হয়তো পারবো। কিন্তু তার জন্য অনেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চমকপ্রদ সমাধান লাগবে। একে তো মরুভূমির চেয়েও শুষ্ক, তার ওপর বাতাসে অক্সিজেন নেই, আর তাপমাত্রা—মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস!’

‘তাহলে কি কখনো সম্ভব না?’

দাদু এবার এক গাল হেসে বললেন, ‘অসম্ভবকে সম্ভব করার মধ্যে দিয়েই তো আজকের মানব সভ্যতা এ পর্যায়ে এসেছে।’

এই কথোপকথন যেন এক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। আজ বিজ্ঞানীরা যে ধারণাকে বাস্তবতার পথে এগিয়ে নিচ্ছেন, তার নাম টেরাফরমিং (Terraforming)—মানে একটি গ্রহকে মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত করে তোলার প্রযুক্তি।

অনেক দিন ধরেই এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহকেও মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তোলার চিন্তাভাবনা করছেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রক্রিয়ায় কোনো গ্রহের বায়ুমণ্ডল, তাপমাত্রা, পানির পরিমাণ এবং অন্যান্য পরিবেশগত উপাদানগুলি এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়, যাতে সেখানে পৃথিবীর মতো জীবন টিকে থাকতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, টেরাফরমিং কি শুধুই বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন?

এ ব্যাপারে নাসার প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী জেমস গ্রিন বলেছেন, ‘আমাদের প্রযুক্তি দ্রুত উন্নতি করছে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে আমরা মঙ্গলের আকাশে নীল আকাশ দেখতে পারবো।’

<aside> 💡

টেরাফরমিংয়ের ধারণা চমকপ্রদ হলেও সেটি বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বিজ্ঞানীদের সামনে। প্রথম চ্যালেঞ্জটা হলো এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তাই একে বাস্তবে পরিণত করতে লেগে যেতে পারে কয়েক শতাব্দী।

</aside>

image.png

আর প্রখ্যাত বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক আর্থার সি ক্লার্ক একবার বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে মানুষ শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং নতুন নতুন গ্রহের বুকে নতুন ঘর তৈরি করবে।’

বাস্তবে কাজটা কীভাবে করা সম্ভব?

বিজ্ঞানীরা বলেন, মঙ্গলগ্রহ বা অন্য কোনো গ্রহকে মানুষের বসবাস উপযোগী করতে কয়েকটি ধাপে টেরাফরমিং করা সম্ভব। সেগুলো হলো: প্রথমেই গ্রহটির বায়ুমণ্ডল তৈরি করা। মঙ্গলের মতো গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল বেশ পাতলা। আবার সেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণও প্রচুর। সেজন্য বিজ্ঞানীরা প্রস্তাব করেছেন, গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে গ্রহটির তাপমাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। কিছু বিজ্ঞানী মঙ্গল গ্রহের চারিদিকে বিশালাকার কৃত্রিম আয়না ব্যবহার করে সূর্যের তাপ মঙ্গলের মাটিতে প্রতিফলিত করার চিন্তাও করেছেন।

শুধু তাপ বাড়ালেই হবে না, সে তাপ নিয়ন্ত্রণও করতে হবে, যাতে গ্রহটি ধীরে ধীরে বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠে। সে কাজটি করা হবে দ্বিতীয় ধাপে। যেমন বর্তমান মঙ্গলের তাপমাত্রা মানব বসবাসের উপযোগী নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রহের মেরু অঞ্চলে থাকা বরফ গলিয়ে জলীয় বাষ্প তৈরি করা যেতে পারে, যা গ্রিনহাউস এফেক্ট তৈরি করবে এবং উষ্ণতা বাড়াবে।